প্রকাশিত: ১৯/০৬/২০১৮ ৮:০৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৬ এএম

নিউজ ডেস্ক::

কক্সবাজার জেলায় একদিনে ৭ জনের অস্বাভাবিক মুত্যূর ঘটনা ঘটেছে। রোববার ও সোমবার পৃথক ঘটনায় উখিয়ায় ৪ জন, টেকনাফে ২ জন,সদরে ১জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে পানিতে ডুবে একই পরিবারের তিন শিশু,সড়ক দুর্ঘটনায় দুই চালক,সন্ত্রাসী হামলায় এক রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ছুরিকাঘাতে একজন শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা রয়েছেন।

জানা যায়, ১৮ জুন বিকাল ৫ টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের চাকবৈঠা গ্রামের আবু সিদ্দিকির পুত্র মো: ফাহিম (৮), আবু সিদ্দিকের ছোট ভাই আবদুল কাদেরের কন্যা তাসফিয়া (৬) ও ছাফা মারওয়া (৩) পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো: খাইরুল আলম জানান, বিকালে এই তিন শিশু একটি খেলনা গাড়িতে চড়ে বেড়ায়। এই সময় পরিবারের অজান্তে গাড়িটিসহ তাদের নিজস্ব পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুুঁজির পর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তিন শিশুর দেহ ভাসতে দেখে তাদের উদ্ধার করে দ্রুত উকিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: প্রগতি চাকমা তিন শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। উখিয়া থানার ওসি মো: আবুল খায়ের তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করেন।

একই দিন ১৮ জুন রাত ৮ টার দিকে রোহিঙ্গা ডিস্ট্রিভিউশ সেন্টারের সামনে সংঘবদ্ধ একটি রোহিঙ্গা দল এলোপাতাড়ি কুপিয়ে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প- ২ এর প্রধান মাঝি (প্রধান নেতা) মো: আরিফুল্লাহ(৩৬)কে প্রতিপক্ষ রোহিঙ্গারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে।এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি মো: আবুল খায়ের জানান, রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে রোহিঙ্গাদের প্রধান মাঝি আরিফুল্লাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার সারা শরীরের অসংখ্য ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তিনি জানান, এর আগে ১৯ জানুয়ারী তার উপর রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ হামলা করে। এসময় তিনি বেঁচে গেলেও তার ছোট ভাই মুহিবুল্লাহ ছুরিকাহত হয়। আরিফুল্লাহর হত্যার ঘটনার এখনো রহস্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লাশ থানায় রাখা হয়েছে।উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান জানান, মো: আরিফুল্লাহ মিয়ানমারের রেঙ্গুন বিশ^বিদ্যালয় থেকে বি.এ (অনার্স) পাস একজন রোহিঙ্গা। তিনি ইংরেজিতে কথা বলতে খুবই পারদর্শি। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী এবং বিদেশি উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাথে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলতেন। মুলত তিনি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নানা তথ্য দিতেন। তার সাথে বিদেশিদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকান্ডে সহযোগিতা করতেন।

অপরদিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং শামলাপুর সড়কে সিএনজি ও চাঁদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি চালক নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি বাহরছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর ঘোনারপাড়া এলাকার সৈয়দ নুরের ছেলে ধলা মিয়া। অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনকসহ দুইজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে স্থানীয় পুলিশ ও পাশ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ১৮ জুন সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং শামলাপুরের আঞ্চলিক সড়ক ফরেস্ট অফিসের সামনে এ দূর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, একটি সিমেন্ট বোঝাই চাঁদের গাড়ি (জ্বীপ) হোয়াইক্যং হয়ে যাচ্ছিল। বিপরীতমূখী আসা যাত্রীবাহী সিএনজি ফরেস্ট অফিসের সামনে সড়কের বাঁকের কারণে এ মর্মান্তি দূর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে সিএনজি চালক মারা যান। অপর দুই যাত্রী আহত হন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের এএসআই রাজু কান্তি দাশ সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন হোয়াইক্যং পুলিশের কাছে সিএনজি ও জ্বীপ জব্দ রয়েছে।

একইদিন ১৮জুন রাত সাড়ে ৯টারদিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনে বসবাসকারী হ্নীলা পশ্চিম পানখালীর মৃত ফকির মোহাম্মদের পুত্র রিক্সা চালক শামসুল আলম (৪৮) খারাংখালী ষ্টেশনে অটোরিক্সা চার্জে দেওয়ার জন্য যাত্রাকালে টেকনাফ হতে কক্সবাজারগামী কাঞ্জর পাড়ার আব্দু শুক্কুর কোম্পানীর মালিকানাধীন একটি যাত্রী বোঝাই স্পেশাল বাস (কক্সবাজার-জ-১১-২০৫৩) চাপা দিলে ঘটনাস্থলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
চালক ও হেলপার উক্ত রিক্সা চালককে চিকিৎসার নামে তুলে নিয়ে দক্ষিণ নয়াবাজার সংলগ্ন সাবেক মেম্বার রওশন আলীর বাড়ির সামনে সড়কের পশ্চিমে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালক ও যাত্রীরা দেখতে পেয়ে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসআই রাজু কান্তি দাশ ধাওয়া করে বাসটিকে কাঞ্জরপাড়া হতে আটক করলেও চালক-হেলপার পালিয়ে যায়। সড়কে যানবাহন আইনী দূর্বলতার সুযোগে অনেক চালক-হেলপার ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নিহত রিক্সা চালকের বাড়িতে স্ত্রী ও ৭ ছেলে-মেয়ে রয়েছে।এনিয়ে ১৯ জুন মালিক পক্ষ এবং নিহত পক্ষের সাথে সমঝোতা বৈঠক করে বিষয়টির সমাধান বের করার চেষ্টা করলেও এক জায়গা দূঘর্টনার কবলে পড়া রোগীকে চিকিৎসার নামে অপর স্থানে ছুঁড়ে মেরে হত্যার বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ক্ষুদ্ধ জনসাধারণ প্রধান সড়কে লাশকে ঘিরে ভিড় জমায়। পুলিশ খবর পেয়ে সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবী জানিয়েছে।

এছাড়া ১৭ জুন রবিবার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তৈতৈয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবছার নামের এক যুবককে খুন হয়েছে। এ ঘটনার দায়ে স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী জসিম উদ্দিনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত আবছার কামাল প্রকাশ কালা পুতু তৈতৈয়া গ্রামের মৃত ছৈয়দ নুরের পুত্র। সদর থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,চেয়ারম্যান জসিমের চাচাতো ভাই শফি তৈতৈয়া থেকে আসার সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় সাথে। একপর্যায়ে শফি চেয়ারম্যান জসিমকে খবর দিলে,জসিম দলবল নিয়ে তৈতৈয়া গিয়ে আবছার কামাল প্রকাশ কালা পুতুকে প্রহার করে। এতে আবছার কামাল গুরুতর আহত হলে চেয়ারম্যান জসিম তার গাড়িতে করে লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার আবছারকে মৃত ঘোষনা করে। এসময় হাসপাতালে ক্ষুব্দ জনতার সাথে চেয়ারম্যান জসিমের উপর চড়াও হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জসিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এসময় জনতা জসিমের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করে। এ ঘনটায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার খুনের ঘটনায় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান সোমবার তাকে হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...